ভারী জল কি ?

ভারী জল কী? – গঠন, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

ভারী জল বা ডয়টেরিয়াম অক্সাইড কী? এর গঠন, হালকা জলের থেকে পার্থক্য এবং পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানুন।


ভারী জল কী?

ভারী জল (Heavy Water) হলো সাধারণ জলের একটি বিশেষ রূপ, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুর বদলে তার ভারী আইসোটোপ ডয়টেরিয়াম (Deuterium) থাকে। ডয়টেরিয়াম, যা 2H^{2}H2H বা সংক্ষেপে DDD দ্বারা চিহ্নিত, হলো হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ যার নিউক্লিয়াসে এক প্রোটনের সঙ্গে একটি নিউট্রন থাকে।

সাধারণ হাইড্রোজেন যেমন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জল (H2O)(H_2O)(H2​O) গঠন করে, তেমনি ভারী হাইড্রোজেনও অক্সিজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভারী জল বা ডয়টেরিয়াম অক্সাইড (D2O)(D_2O)(D2​O) তৈরি করে। যদিও রাসায়নিক ধর্মে সাধারণ জল ও ভারী জলের কোনো বড় পার্থক্য নেই, ভৌত ধর্মে এদের মাঝে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।


ভারী জলের বৈশিষ্ট্য

  • আপেক্ষিক গুরুত্ব: সাধারণ জলের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১, কিন্তু ভারী জল প্রায় ১.১। অর্থাৎ ভারী জল একটু ভারী।
  • স্ফুটনাঙ্ক: সাধারণ জলের স্ফুটনাঙ্ক ১০০° সেলসিয়াস, আর ভারী জল ১০১.৪২° সেলসিয়াস।
  • প্রাকৃতিক উপস্থিতি: সাধারণ জলে প্রায় ৫০০০ ভাগের মধ্যে ১ ভাগ ভারী জল থাকে।
  • রসায়নিক ধর্ম: ভারী জল ও সাধারণ জলের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই, তবে ভারী জলের বন্ড শক্তি বেশি হওয়ায় এর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া একটু ভিন্ন হতে পারে।

ভারী জলের ব্যবহার

ভারী জল প্রধানত পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র বা পারমাণবিক চুল্লিতে “মডারেটর” হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মডারেটর হলো এমন একটি মাধ্যম যা নিউট্রনকে ধীর করে, যাতে তারা পারমাণবিক বিভাজনের জন্য আদর্শ গতিতে পৌঁছায়। ভারী জল এখানে অপরিহার্য কারণ এটি নিউট্রনকে ধীর করে তবে নিজে নিউট্রন শোষণ করে না, যা পারমাণবিক চুল্লির কার্যকারিতা বাড়ায়।


ভারী জল বা ডয়টেরিয়াম অক্সাইড সাধারণ জলের একটি ভারী ও বিশেষ রূপ, যা পারমাণবিক শক্তি শিল্পে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর রাসায়নিক ধর্ম সাধারণ জলের মতো হলেও ভৌত বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য থাকায় এটি বিশেষ ব্যবহারের জন্য উপযোগী।

সুতরাং, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে ভারী জল ছাড়া আধুনিক শক্তি কেন্দ্র কল্পনাও করা যায় না।