গ্রিন হাউস গ্যাস কি ?

গ্রিন হাউস গ্যাস কী? বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও প্রভাবগ্রিন হাউস গ্যাস কি ?

গ্রিন হাউস গ্যাস কী এবং কীভাবে এটি পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য দায়ী? কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্পসহ বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাসের ভূমিকা ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

গ্রিন হাউস গ্যাস কী?

সূর্য থেকে নির্গত তেজরশ্মির মধ্যে আছে আল্ট্রাভায়োলেট (অতিবেগুনি রশ্মি), দৃশ্যমান আলো এবং ইনফ্রারেড (অবলোহিত) রশ্মি। এই অবলোহিত রশ্মিই পৃথিবীর তাপের প্রধান উৎস। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে এসে পৃথিবীর পৃষ্ঠকে গরম করে। এরপর পৃথিবী নিজেও লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি বিকিরণ করে।

এই অবলোহিত তাপরশ্মি যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, তখন পৃথিবীর চারপাশে থাকা গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো (বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইড – CO₂) এই তাপ রশ্মিকে শোষণ করে আটকে রাখে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াকেই গ্রিন হাউস প্রক্রিয়া বলা হয় এবং এই গ্যাসগুলোকে গ্রিন হাউস গ্যাস বলা হয়।


গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রধান উদাহরণ

  • কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂): পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য প্রায় ৫৫% দায়ী।
  • জলীয় বাষ্প: বায়ুমণ্ডলে সর্বাধিক পরিমাণে বিদ্যমান।
  • মিথেন (CH₄): প্রায় ১৫% দায়ী।
  • নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), অ্যামোনিয়া প্রভৃতি।

বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের সম্পর্ক

শিল্পায়ন, নগরায়ণ, বন নিধন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত বাড়াচ্ছে। এর ফলে তাপ শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাও ক্রমাগত বাড়ছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন নামে পরিচিত।

বিশ্বের গড় তাপমাত্রা মাত্র ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেও তা প্রলয়ংকারী প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:

  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে।
  • সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাবে, ফলে সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলগুলি জলমগ্ন হবে।
  • উচ্চ তাপমাত্রায় শস্য ও ফসলের ক্ষতি হবে।
  • পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে।

পরিবেশে ভারসাম্য ও মানবসৃষ্ট প্রভাব

প্রকৃতিতে কার্বন ও অক্সিজেনের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন উৎপন্ন করে। জলাশয়গুলো কার্বন ডাই অক্সাইডকে জলীয় অঙ্গনে ধারণ করে।

তবে মানুষের কার্যকলাপ, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বনচ্ছেদন, শিল্প উৎপাদন, এই ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত গ্রিন হাউস গ্যাস জমা হচ্ছে, যা গ্রিন হাউস এফেক্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে।


গ্রিন হাউস প্রক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচার উপায়

  • জীবাশ্ম জ্বালানির অকারণ ব্যবহার কমানো।
  • বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ জোরদার করা।
  • জলাভূমি রক্ষা ও সংরক্ষণ।
  • নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
  • পরিবেশ বান্ধব নীতি ও প্রযুক্তির উন্নয়ন।

গ্রিন হাউস গ্যাস এবং তার প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি বা বিশ্ব উষ্ণায়ন একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। আমাদের সকলে মিলিতভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করলে এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সচেতনতা, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সঠিক নীতি গ্রহণই পারে গ্রিন হাউস এফেক্টের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে।