ভাইরাস কি ?

ভাইরাস কী? গঠন, বৈশিষ্ট্য ও জীবনচক্রসহ বিস্তারিত তথ্য

ভাইরাস কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে? ভাইরাসের গঠন, বৈশিষ্ট্য, সংক্রমণ প্রক্রিয়া ও উদাহরণসহ সহজ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা।


ভাইরাস কী?

ভাইরাস হলো একপ্রকার অকোষীয়, জড় ও জীবের মাঝামাঝি অতিসূক্ষ্মদেহী অণুবিশেষ, যা শুধুমাত্র পোষক কোষের ভিতর বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। ভাইরাসের গঠন নিউক্লিওপ্রোটিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং তারা উদ্ভিদ, প্রাণী ও ব্যাকটেরিয়ার দেহে রোগ সৃষ্টি করে।

‘ভাইরাস’ শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে আগত, যার অর্থ ‘জীবদেহঘটিত বিষ’। প্রথমবার ১৭৯৬ সালে বিজ্ঞানী জেনার ভাইরাসজনিত বসন্ত রোগের কারণ আবিষ্কার করেন। পরে ১৮৯৮ সালে ডাচ বিজ্ঞানী বাইজারিংক ভাইরাস শব্দটি প্রবর্তন করেন।


ভাইরাসের গঠন ও নামকরণ

প্রত্যেক ভাইরাসের একটি একক কণাকে ভাইরিয়ন বলা হয়। বিভিন্ন ভাইরাসের উদাহরণ যেমন: টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV), এইচআইভি (HIV), ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি।


ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

১. সজীব বৈশিষ্ট্য

  • ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA বা RNA) এবং প্রোটিন থাকে। নিউক্লিক অ্যাসিড থেকেই ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে।
  • ভাইরাস কেবলমাত্র জীবিত পোষক কোষের ভিতরই বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।
  • ভাইরাস পূর্ণ পরজীবী, সংক্রামক এবং মিউটেশানে সক্ষম।

২. জড় বা নির্জীব বৈশিষ্ট্য

  • ভাইরাস অকোষীয়, অর্থাৎ এতে কোষপর্দা বা প্রোটোপ্লাজম থাকে না।
  • ভাইরাসের বৃদ্ধি হয় না, পরিবেশের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না, চলনক্ষমতা নেই এবং কোনো বিপাকক্রিয়া সম্পাদন করে না।
  • এটি কেলাসিত বা স্থির।
  • পোষক দেহের বাইরে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় ও জননক্ষম নয়।

৩. বিশেষ বৈশিষ্ট্য

  • ভাইরাস জীব ও জড় বৈশিষ্ট্যের মধ্যবর্তী এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখা যায় এমন একমাত্র অতিসূক্ষ্ম অকোষীয় পরজীবী।
  • ভাইরাসের দেহ দুই অংশে বিভক্ত: বহিরাবরণসহ ক্যাপসিড এবং ক্যাপসিড দ্বারা আবৃত নিউক্লিক অ্যাসিড বা নিউক্লীয়য়েড।
  • ভাইরাস জলে, স্থলে, বায়ুতে সর্বত্র বিরাজমান।
  • ভাইরাসের আকার এতটাই ক্ষুদ্র যে এক ইঞ্চিকে এক লক্ষভাগ করলে তা প্রায় ভাইরাসের আকারের সমান হয়। একটি ভাইরাসকে এক কোটি আশি লক্ষ গুণ বড় করলে তা প্রায় ১০ ফুট লম্বা দেখায়।

ভাইরাসের জীবনচক্র ও সংক্রমণ

ভাইরাস নিজে থেকে কোনো শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ করতে পারে না। এটি বংশবৃদ্ধির জন্য পোষক কোষে প্রবেশ করে তার যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করে। পোষক কোষে ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিড প্রতিলিপি করে নতুন ভাইরিয়ন তৈরি হয়। এরপর এই নতুন ভাইরাসগুলো পোষক কোষ ভেঙে বাইরে আসে এবং অন্য কোষ সংক্রমিত করে।


ভাইরাসের উদাহরণ ও প্রভাব

  • টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV): উদ্ভিদের ওপর আক্রমণকারী ভাইরাস।
  • এইচআইভি (HIV): মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংসকারী ভাইরাস।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস: শ্বাসনালী সংক্রমণের কারণ।

ভাইরাস মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলে। নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচআইভি/এডস, হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু ইত্যাদি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে।


ভাইরাস হলো অকোষীয়, সংক্রামক, পরজীবী জীব, যা কেবল পোষক কোষেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এটি জীব ও নির্জীব বৈশিষ্ট্যের মধ্যবর্তী এক অদ্ভুত জীবজন্তু। ভাইরাসের গঠন নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের সমন্বয়ে, এবং এর ক্ষুদ্রতা অত্যন্ত বিস্ময়কর। আমাদের জীবনে ভাইরাসের প্রভাব যেমন বিপজ্জনক, তেমনি তাদের থেকে আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিক ও টিকা মানবজীবনের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।