ভিনিগার কী এবং কীভাবে এটি তৈরি হয়? অ্যাসেটিক অ্যাসিডের গঠন, উৎস ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিনিগারের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ভিনিগার কী?
ভিনিগার হলো অ্যাসেটিক অ্যাসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ, যার মধ্যে সাধারণত ৪ থেকে ৮ শতাংশ অ্যাসেটিক অ্যাসিড এবং সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল থাকে। ভিনিগারের রাসায়নিক গঠন থেকে জানা যায় যে, মিথেন (CH₄) এর একটি হাইড্রোজেন পরমাণুকে কার্বক্সিল গ্রুপ (COOH) দ্বারা প্রতিস্থাপন করলে অ্যাসেটিক অ্যাসিড (CH₃COOH) গঠন হয়।
ভিনিগারের উৎস ও প্রস্তুতি
- প্রাকৃতিক উৎস: ভিনিগার প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় টক মদ, কিছু ফলের রস এবং উদ্ভিজ্জ তেলের মধ্যে।
- প্রস্তুতি পদ্ধতি: মদের ইথাইল অ্যালকোহল (C₂H₅OH) কে বায়ুর অক্সিজেনে বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে আংশিক জারিত করলে অ্যাসেটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা ভিনিগারের মূল উপাদান।
- রাসায়নিক প্রস্তুতি: অ্যাসিটিলিন (C₂H₂) কে গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) এবং বায়ুর অক্সিজেনে বিক্রিয়ায় আনা হয় অ্যাসেটিক অ্যাসিড।
- কাঠ থেকে প্রস্তুতি: কাঠের অন্তর্ধূম পাতনে পায়রোলিগনিয়াস অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা ৮-১০% অ্যাসেটিক অ্যাসিড ধারণ করে।
ভিনিগারের প্রকৃতি
- ভিনিগার হলো তীব্র গন্ধযুক্ত, বর্ণহীন জৈব তরল।
- এটি জলে দ্রবীভূত হয়।
- ভিনিগারে অনেক জৈব পদার্থের পাশাপাশি আয়োডিন, সালফার ও ফসফরাস দ্রবীভূত হতে পারে।
ভিনিগারের ব্যবহার
- পরীক্ষাগারে: বিকারক ও দ্রাবক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- খাদ্য সংরক্ষণ: মাছ-মাংস সংরক্ষণে জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
- রাসায়নিক শিল্প: অ্যাসিটেট লবণ, অ্যাসিটোন, অ্যাসপিরিন, কৃত্রিম সিল্ক, রঞ্জক দ্রব্য ইত্যাদি তৈরিতে ভিনিগার ব্যবহৃত হয়।
- খাদ্য ও আচার: বিভিন্ন ধরনের খাবার ও আচার তৈরিতে অপরিহার্য উপাদান।
- অতিরিক্ত ব্যবহার: রাবার ঘন করতে, হোয়াইট লেড নামক সাদা রং প্রস্তুতিতে ভিনিগারের ভূমিকা রয়েছে।
ভিনিগার বা অ্যাসেটিক অ্যাসিডের লঘু দ্রবণ জীবন ও শিল্পের নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক ও শিল্পোৎপাদনে এর ব্যবহার অপরিসীম। সঠিক জ্ঞান ও যত্নে এর সঠিক ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সুস্থ রাখে।

