খাদ্য লবণ কাকে বলে ?

খাদ্য লবণ কী? উৎপত্তি, গঠন এবং ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

খাদ্য লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) কীভাবে তৈরি হয়, এর ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য কী এবং দৈনন্দিন জীবনে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানুন।

খাদ্য লবণ কী?

খাদ্য লবণ হলো রাসায়নিক উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। এটি প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, বিশেষ করে সমুদ্রের জলে গড়ে ২.৬% NaCl দ্রবীভূত থাকে। এর পাশাপাশি খনিজ আকারে মাটির নিচে খনি থেকেও খাদ্য লবণ আহরণ করা হয়, যাকে সৈন্ধব লবণ বলা হয়।


খাদ্য লবণের প্রস্তুতি

গ্রীষ্ম প্রধান দেশে, সমুদ্রের ধারে বড় বড় জলাধারগুলোতে সমুদ্রজল রেখে সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত করে লবণের ঘনীভূত দ্রবণ তৈরি করা হয়। এই খাদ্য লবণের মধ্যে সাধারণত সোডিয়াম সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড মিশে থাকে।

অবিশুদ্ধ খাদ্য লবণ থেকে বিশুদ্ধ NaCl আলাদা করার জন্য গাঢ় জলীয় দ্রবণে HCl গ্যাস চালনা করা হয়। এতে আলাদা হওয়া কেলাসকে টেবিল সল্ট বা বিশুদ্ধ খাদ্য লবণ বলা হয়।


খাদ্য লবণের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

  • ভৌত অবস্থা: NaCl হলো বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বচ্ছ এবং কঠিন কেলাস। এর গলনাঙ্ক ৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • দ্রাব্যতা: জলীয় দ্রবণে খুব সহজে দ্রবীভূত হয়।
  • উদগ্রাহীতা: বিশুদ্ধ NaCl জলাকর্ষী নয়, তবে সাধারণ খাদ্য লবণে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইডের কারণে এটি উদগ্রাহী হয়, যার ফলে বর্ষায় খাদ্য নুন গলে যেতে পারে।
  • রাসায়নিক ধর্ম: NaCl একটি শমিত লবণ। এর জলীয় দ্রবণে অ্যাসিড বা ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায় না। জলীয় দ্রবণে এটি Na⁺ এবং Cl⁻ আয়নে বিভক্ত হয়, ফলে এটি তড়িত পরিবাহী।
  • প্রতিক্রিয়া: NaCl জলীয় দ্রবণে সিলভার নাইট্রেট দ্রবণ (AgNO₃) দিলে সাদা সিলভার ক্লোরাইড (AgCl) আলগা হয়, যা জলতে অবিলম্বে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

খাদ্য লবণের ব্যবহার

  • খাদ্য: প্রধানত রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য খাদ্য লবণ ব্যবহার হয়।
  • স্বাস্থ্য: চিকিৎসায় ‘স্যালাইন ওয়াটার’ হিসেবে 0.9% NaCl এর জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়, যা দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
  • রাসায়নিক শিল্প: ধাতব সোডিয়াম, কস্টিক সোডা, সোডিয়াম কার্বনেট, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও ক্লোরিন উৎপাদনে NaCl অপরিহার্য উপাদান।
  • অন্যান্য শিল্প: রঞ্জনশিল্প, সাবান উৎপাদন এবং মাটির বাসন বা পাত্রে চকচকে প্রলেপ দিতে NaCl ব্যবহৃত হয়।
  • শীতলীকরণ: বরফের সঙ্গে মিশিয়ে হিমমিশ্রণ (-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • জীবাণুনাশক: মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণে NaCl ব্যবহার করা হয় কারণ এটি জীবাণু বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং পচন রোধ করে।

খাদ্য লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য উপাদান। রান্না থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিল্প এবং খাদ্য সংরক্ষণ পর্যন্ত এর ব্যবহার বিস্তৃত। খাদ্য লবণের বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা বুঝে সঠিকভাবে ব্যবহার করাই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ জীবনযাত্রার জন্য জরুরি।ন নিবারক। তাই, মাছ- মাংস প্রভৃতি খাদ্যবস্তু সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয় ।