সবাত ও অবাত শ্বসনের মধ্যে মূল পার্থক্য কী? গ্লুকোজের জারণ প্রক্রিয়া, তাপ উৎপাদন ও রাসায়নিক সমীকরণসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
সবাত শ্বসন কী?
সবাত শ্বসন হলো অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সজীব জীবের কোষে সংঘটিত একটি প্রক্রিয়া, যা সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকনড্রিয়ামে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ সম্পূর্ণভাবে জারণ করে জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং প্রচুর তাপশক্তি মুক্তি পায়।
সবাত শ্বসন কোষ বা জীবদেহের কোনো ক্ষতি করে না এবং এটি জীবনের জন্য অপরিহার্য। এটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়: গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবল-চক্র এবং প্রান্তীয় শ্বসন।
সবাত শ্বসনের রাসায়নিক সমীকরণ: C₆H₁₂O₆ + 6O₂ → 6CO₂ + 6H₂O + 686 কিলোক্যালোরি
(অন্যান্য সূত্র অনুযায়ী 674 কিলোক্যালোরি হিসাবেও ধরা হয়।)
অবাত শ্বসন কী?
অবাত শ্বসন ঘটে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে। এটি কোষের কেবলমাত্র সাইটোপ্লাজমে ঘটে এবং সাধারণত ক্ষতিকর প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে গ্লুকোজ আংশিক জারণ হয়, যার ফলে ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
এই প্রক্রিয়ায় তাপ উৎপাদন কম হয় এবং গ্লাইকোলাইসিস একমাত্র পর্যায় যা অবাত শ্বসনে সম্পন্ন হয়।
অবাত শ্বসনের রাসায়নিক সমীকরণ: C6H12O6 → 2C2H5OH + 2CO2 + 50 কিলোক্যালোরি।
(অন্যান্য সূত্র অনুযায়ী 28 কিলোক্যালোরি হিসাবেও ধরা হয়।)
সবাত ও অবাত শ্বসনের তুলনা
| বৈশিষ্ট্য | সবাত শ্বসন | অবাত শ্বসন |
|---|---|---|
| অক্সিজেন উপস্থিতি | উপস্থিত | অনুপস্থিত |
| ঘটনাস্থল | সাইটোপ্লাজম ও মাইটোকনড্রিয়া | কেবল সাইটোপ্লাজম |
| গ্লুকোজের জারণ | সম্পূর্ণ | আংশিক |
| উৎপন্ন পদার্থ | জল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড | ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড |
| তাপশক্তি উৎপাদন | ৬৮৬ কিলোক্যালোরি (প্রতি অণু) | ৫০ কিলোক্যালোরি (প্রতি অণু) |
| প্রক্রিয়ার পর্যায় | গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবল-চক্র, প্রান্তীয় শ্বসন | গ্লাইকোলাইসিস (শুধুমাত্র) |
| কোষ ক্ষতি | না | হতে পারে (ক্ষতিকর প্রক্রিয়া) |
সবাত শ্বসন এবং অবাত শ্বসন জীবজগতের দুটি মৌলিক শ্বসন প্রক্রিয়া। সবাত শ্বসন অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ জারণ ঘটিয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করে, যা জীবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অপরদিকে, অবাত শ্বসন অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে আংশিক জারণ ঘটিয়ে কম শক্তি উৎপন্ন করে এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। এই দুটো প্রক্রিয়া জীবের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

