স্তূপ পর্বত কাকে বলে ?

স্তূপ পর্বত কী? সৃষ্টি কারণ ও বৈশিষ্ট্যের বিস্তারিত আলোচনা

স্তূপ পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয়? স্তূপ পর্বতের গঠন, সৃষ্টির কারণ এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সহজ ভাষায় বিস্তারিত জানুন। স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার সম্পর্কও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

স্তূপ পর্বত কী?

স্তূপ পর্বত হলো এক ধরনের উঁচু ভূমি, যা সাধারণত দুটি সমান্তরাল ফাটলের (চ্যুতির) মধ্যবর্তী অংশ হিসেবে সৃষ্টি হয়। এই ভূমি প্রায়শই পাথরে ঢাকা থাকে এবং ভূমিকম্প বা পার্থিব গতির কারণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় উঁচু অবস্থানে উঠে আসে। কখনও কখনও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিচে বসে যাওয়ায় মধ্যবর্তী অংশ উচ্চভূমির আকার ধারণ করে, যাকে স্তূপ পর্বত বলা হয়।


স্তূপ পর্বত সৃষ্টির কারণ

১. ভূমিকম্পের পার্শ্বচাপ বা নিম্নচাপ
জমির অভ্যন্তরে প্রবল ভূমিকম্পের সময় শিলাস্তরে প্রচন্ড টান ও চাপের সৃষ্টি হয়, যার ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ফাটল বা চ্যুতি দেখা দেয়।

২. চ্যুতি (Fault Displacement)
ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে নীচে বসে যেতে পারে বা উপরে উঠতে পারে। এই ওঠানামাকে চ্যুতি বলা হয়।

৩. দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী ভূমি
যখন দুটি সমান্তরাল ফাটলের মাঝখানের ভূমি পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উঁচুতে উঠে আসে, তখন সেটি স্তূপ পর্বতের রূপ নেয়।

৪. পার্শ্ববর্তী ভূমির নিম্নগামী গতি
মাঝখানের ভূমির দুপাশের ভূমি কোনো কারণে নিচে বসে গেলেও মধ্যবর্তী অংশ স্তূপ পর্বত হিসেবে দেখা দেয়।


স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য

  • মাথা চ্যাপ্টা: স্তূপ পর্বতের শীর্ষাংশ কিছুটা সমতল বা চ্যাপ্টা ধরনের হয়।
  • খাড়া ঢাল: স্তূপ পর্বতের পার্শ্ববর্তী ঢালগুলো সাধারণত খুব খাড়া এবং খাঁজযুক্ত হয়।
  • মোটামুটি উচ্চতা: স্তূপ পর্বতগুলি খুব বেশি উঁচু হয় না, তবে তাদের খাড়া ঢাল ও চ্যাপ্টা চূড়া সহজেই চোখে পড়ে।
  • চ্যুতি ও গ্রস্ত উপত্যকা: স্তূপ পর্বতের চারপাশে অনেক চ্যুতি ও গ্রস্ত উপত্যকা থাকতে দেখা যায়।

গ্রস্ত উপত্যকা কী?

গ্রস্ত উপত্যকা হলো দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ যেখানে ভূমি নিচে বসে গিয়ে নিচু জায়গা তৈরি হয়। স্তূপ পর্বতের পাশেই সাধারণত এই ধরনের উপত্যকা পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নর্মদা উপত্যকা একটি গ্রস্ত উপত্যকার পরিচিত উদাহরণ। স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা একসঙ্গে ভূ-আকৃতির এই প্রক্রিয়ায় জন্ম নেয়।


স্তূপ পর্বত হলো ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের উঁচু ভূমি, যা ভূমিকম্প ও ভূমিকম্পজনিত ফাটলের কারণে গঠিত। এর খাড়া ঢাল, চ্যাপ্টা চূড়া ও পার্শ্ববর্তী গ্রস্ত উপত্যকা স্তূপ পর্বতকে অন্যান্য প্রকার পর্বতের থেকে আলাদা করে। ভারতের সাতপুরা পর্বত ও নর্মদা উপত্যকা এদের অন্যতম পরিচিত উদাহরণ।