রূপান্তরিত শিলা কীভাবে সৃষ্টি হয়? রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য, স্পর্শ-সংযোগ রূপান্তর ও শিলাচক্র সম্পর্কে সহজ ভাষায় বিস্তারিত জানুন।
রূপান্তরিত শিলা কী?
রূপান্তরিত শিলা বলতে বোঝায় আগ্নেয় ও পাললিক শিলাগুলো যেগুলো অতিরিক্ত চাপ, তাপ বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন ধরনের শিলায় রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ, পূর্বের শিলাগুলোর গঠন ও বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া শিলাকে রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত শিলা বলা হয়।
রূপান্তরিত শিলা সৃষ্টির কারণ
১. অত্যধিক চাপের প্রভাব:
ভূ-গর্ভে শিলাস্তরের ওপর চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পেলে আগ্নেয় বা পাললিক শিলাগুলো ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আগ্নেয়শিলা গ্রানাইট এবং নাইস, অথবা পাললিক শিলা বেলেপাথর ও কোয়ার্টজাইট এই প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়।
২. অত্যধিক তাপের প্রভাব:
ভূমিকম্প বা অন্যান্য ভূ-গঠনিক ক্রিয়াকলাপে শিলাগুলো ভূগর্ভে চাপা পড়ে এবং প্রচন্ড তাপের প্রভাবে রাসায়নিক ও ভৌত পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে শিলা মার্বেল বা অন্যান্য রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।
স্পর্শ-সংযোগ রূপান্তর কী?
আগ্নেয়গিরির আগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূমির নিচ থেকে নির্গত উত্তপ্ত লাভার স্পর্শে শিলাগুলো রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে স্পর্শ-সংযোগ রূপান্তর বলে। এর মাধ্যমে বেলেপাথর কোয়ার্টজাইটে এবং চুনাপাথর মার্বেলে রূপান্তরিত হয়।
রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য
- আগ্নেয় শিলা রূপান্তরিত হলে শিলার মধ্যে খনিজগুলি একদিকে সঞ্চিত হয়ে উচ্চ মানের স্ফটিকযুক্ত শিলা তৈরি হয় (যেমন: নাইস)।
- পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে তা আগের চেয়ে কঠিন ও ঘন হয় (যেমন: কোয়ার্টজাইট)।
- রূপান্তরের ফলে শিলাগুলোর মধ্যে জীবাশ্ম পাওয়া যায় না, কারণ প্রচন্ড তাপ ও চাপ প্রাণী বা উদ্ভিদের অবশেষ ধ্বংস করে দেয়।
রূপান্তরিত শিলার উদাহরণ
আগ্নেয় শিলা | রূপান্তরিত শিলা |
---|---|
গ্র্যানাইট (Granite) | নাইস (Gneiss) |
ব্যাসল্ট (Basalt) | অ্যাম্ফিবোলাইট (Amphibolite) |
অগাইট (Augite) | হর্ণব্লেড (Hornblende) |
পাললিক শিলা | রূপান্তরিত শিলা |
---|---|
বেলেপাথর (Shale) | কোয়ার্টজাইট (Quartzite) |
চুনাপাথর (Limestone) | মার্বেল (Marble) |
কাদাপাথর (Claystone) | স্লেট (Slate) |
শিলাচক্র কী?
শিলাচক্র হলো শিলাগুলোর ক্রমাগত পরিবর্তনের একটি প্রাকৃতিক চক্র। এর ধাপগুলো হলো:
১. আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি: ভূ-গর্ভের গলিত ম্যাগমা বা লাভা ঠান্ডা হয়ে আগ্নেয় শিলা তৈরি করে (যেমন: ব্যাসল্ট)।
২. পাললিক শিলার সৃষ্টি: আবহবিক প্রক্রিয়ায় আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নদী, হ্রদ ও সমুদ্রের তলদেশে পলি হিসেবে জমা হয়, যা পরবর্তীতে পাললিক শিলা (যেমন: বেলেপাথর, চুনাপাথর) গঠন করে।
৩. রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি: অতিরিক্ত চাপ ও তাপের প্রভাবে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় (যেমন: মার্বেল, কোয়ার্টজাইট)।
৪. চক্রের পুনরাবৃত্তি: রূপান্তরিত শিলা আবার পাললিক বা আগ্নেয় শিলায় রূপান্তরিত হতে পারে, এবং এই পরিবর্তন চক্রাকারে চলতে থাকে।
রূপান্তরিত শিলা হলো পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ শক্তিশালী প্রক্রিয়ার এক ফলাফল, যা আমাদের পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিলাগুলোর এই পরিবর্তন ভূ-পৃষ্ঠের আকৃতি ও গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখে। শিলাচক্রের মাধ্যমে আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারি এবং পৃথিবীর ভূতত্ত্বের জটিলতা অনুধাবন করতে সক্ষম হই।