ব্লিচিং পাউডার কি ?

ব্লিচিং পাউডার কী? গঠন, প্রস্তুতি ও ব্যবহারব্লিচিং পাউডার কি ?

ব্লিচিং পাউডার কী এবং এটি কীভাবে তৈরি হয়? ক্যালসিয়াম ক্লোরো-হাইপোক্লোরাইটের গঠন, রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য ও বহুমুখী ব্যবহারের তথ্য।


ব্লিচিং পাউডার কী?

ব্লিচিং পাউডার একটি রাসায়নিক পদার্থ, যার মূল উপাদান হলো ক্যালসিয়াম ক্লোরো-হাইপোক্লোরাইট, যার রসায়নিক সূত্র Ca(OCl)ClCa(OCl)ClCa(OCl)Cl। এটি বহুল ব্যবহৃত একটি শক্তিশালী বিরঞ্জক ও জীবাণুনাশক। সাধারণত এটি সামান্য হলদে আভার রঙের, অনিয়মিত কঠিন কণা আকারে পাওয়া যায় এবং এর গন্ধ তীব্র ও ঝাঁঝালো, যা ক্লোরিনের মতো।


ব্লিচিং পাউডারের প্রস্তুতি

ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (কলিচুন) এবং ক্লোরিন গ্যাসের বিক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া সাধারণত ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আবদ্ধ পাত্রে সম্পন্ন হয়।

প্রতিক্রিয়া: 2Ca(OH)2 + 2Cl2 → Ca(OCl)2 + 2H2O + CaCl2

এখানে কলিচুন ও ক্লোরিন মিলিয়ে ব্লিচিং পাউডার উৎপন্ন হয়।


রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

  • ব্লিচিং পাউডার জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত হয় এবং জলীয় বাষ্প শোষণ করে।
  • জলের সঙ্গে এর বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট তৈরি হয়:

  • লঘু অ্যাসিডের সংস্পর্শে এটি ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা এর তীব্র বিরঞ্জক ক্ষমতার কারণ।
  • খোলা অবস্থায় রেখে দিলে বায়ুর জলীয় বাষ্প এবং কার্বনিক অ্যাসিডের (CO₂ + জল) সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্লোরিন গ্যাস ছাড়ে:

ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার

  • জীবাণুনাশক: পানীয় জল জীবাণুমুক্ত করতে এবং হাসপাতাল, নার্সিং হোমসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সংক্রামণ প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
  • বিরঞ্জক হিসেবে: কাগজ, বস্ত্র ও বিভিন্ন শিল্পে রঞ্জক পদার্থ অপসারণের জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার হয়।
  • রাসায়নিক শিল্পে: ক্লোরোফর্ম ও অন্যান্য রাসায়নিক তৈরিতে ব্লিচিং পাউডারের ব্যবহার রয়েছে।
  • গৃহস্থালি: কাপড় ধোয়া, বাথরুম ও রান্নাঘরের জীবাণু নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সাবধানতা ও রক্ষণাবেক্ষণ

  • ব্লিচিং পাউডার তীব্র রাসায়নিক গন্ধযুক্ত এবং চোখ, ত্বক বা শ্বাসনালীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • খোলা অবস্থায় রাখলে এটি ক্লোরিন গ্যাস নির্গত করতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট ও আলার্জির কারণ হতে পারে।
  • ব্যবহারের সময় ভালো বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা উচিত এবং শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিৎ।

ব্লিচিং পাউডার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং শিল্পক্ষেত্রে অপরিহার্য একটি রাসায়নিক উপাদান। এর শক্তিশালী বিরঞ্জক ও জীবাণুনাশক ক্ষমতার কারণে এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করাও জরুরি।