ফুলারেন কি ?

ফুলারেন কী? গঠন, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

ফুলারেন কী এবং এটি কার্বনের অজানা রূপ হিসেবে কীভাবে আবিষ্কৃত হলো? ফুলারেনের গঠন, বৈশিষ্ট্য ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব সহজ ভাষায় জানুন।


ফুলারেন কী?

ফুলারেন হলো কার্বনের একটি অনন্য আণবিক রূপভেদ, যা ১৯৯০ সালে আবিষ্কৃত হয়। এতে বহু কার্বন পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি খাঁচার মতো বা গোলক আকৃতির কাঠামো গঠন করে। ফুলারেনের আকৃতি দেখতে ফুটবল বা মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার বাকমিনস্টার ফুলারের তৈরি স্টেডিয়ামের গম্বুজের মতো গঠনবদ্ধ হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে।


ফুলারেনের গঠন

সর্বাধিক পরিচিত ফুলারেন হলো বাকমিনস্টার ফুলারেন বা C60​, যার অর্থ ৬০টি কার্বন পরমাণু একত্রিত হয়ে একটি গোলকীয় অণু তৈরি করে। এই অণুকে ‘বাকি বল’ও বলা হয়। এছাড়া আরও বড় আকারের ফুলারেনও পাওয়া যায়, যেখানে ৭০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত কার্বন পরমাণু যুক্ত থাকে।

ফুলারেন স্ফটিকাকার নয় এবং এর কোনও নির্দিষ্ট অনুসজ্জা বা ধারাবাহিক কাঠামো নেই। এটি বিচ্ছিন্ন পরমাণুসমষ্টি বা আণবিক গুচ্ছ।


ফুলারেনের বৈশিষ্ট্য

  • ফুলারেনের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো প্রতি C60​​ অণুতে তিনটি অ্যালকালি ধাতু যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম যুক্ত করলে ওই পদার্থটি অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় (প্রায় ৪০ কেলভিন) বৈদ্যুতিক অতিপরিবাহীতা প্রদর্শন করে। অর্থাৎ এটি কার্যত রোধশূন্য হয়ে যায়।
  • ফুলারেনের গঠন ও বৈশিষ্ট্য এটিকে সুপারকন্ডাকটিভ, অর্ধপরিবাহী এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক প্রযুক্তিতে সম্ভাবনাময় উপাদান হিসেবে পরিণত করেছে।

ফুলারেনের ব্যবহার ও গুরুত্ব

  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা: ফুলারেন বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
  • ন্যানোটেকনোলজি: ফুলারেনের অনন্য গঠন ন্যানোটেকনোলজি ও আধুনিক উপকরণের উন্নয়নে সহায়ক।
  • সুপারকন্ডাকটিভ ডিভাইস: নিম্ন তাপমাত্রায় ফুলারেনের অতিপরিবাহী বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সে প্রয়োগযোগ্য।
  • ঔষধ প্রস্তুতি: ফুলারেনের অণুমাত্রার কারণে এটি ঔষধ পরিবহন ও নির্দিষ্ট টার্গেটিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফুলারেন কার্বনের একটি আধুনিক ও অনন্য আণবিক রূপ, যা তার গোলকীয় গঠন ও বৈশিষ্ট্যের জন্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর আবিষ্কার ন্যানোটেকনোলজি ও আধুনিক বিজ্ঞানকে নতুন দিক দেখিয়েছে। ফুলারেনের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার আরও বিস্তৃত হতে চলেছে ভবিষ্যতে।