জলদূষণ কাকে বলে ?

জলদূষণ কাকে বলে ?


জলদূষণ কাকে বলে এবং জলদূষণের কারণ ও জলদূষণের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে এই পোস্টে আলোচনা করা হল।

জলদূষণ কাকে বলে ?

প্রকৃতি প্রদত্ত বিশুদ্ধ জলে নানা ধরনের অবাঞ্চিত বস্তু বা জীবাণু মিশে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠাকে জলদূষণ বলা হয়।


জলদূষণের কারণ

নানান কারণে জলদূষণ হতে পারে, যেমন :

(১) ক্রমাগত নগরায়ণ এবং শিল্পোন্নতিই হল জলদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ , কারণ এর ফলে : কলকারখানা ও আধুনিক শিল্পনগরীগুলি থেকে বহু দূষণ রাসায়নিক পদার্থ যেমন : ফেনল , অ্যামোনিয়া , ফ্লোরিন , অ্যালকালাইন , সায়ানাইড , আর্সেনিক , পারদ , তামা , সিসা প্রভৃতি অহরহ নালা – নর্দমা দিয়ে নদী এবং সমুদ্রের জলে মিশে জলকে দূষিত করছে।

(২) কোনো কোনো শিল্প কারখানা , বিশেষ করে ধাতব শিল্প ও পারমাণবিক শিল্প ও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে অত্যন্ত গরম জল নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য জল দূষণ ঘটে ।

(৩) নদীর দুপাশে এবং সমুদ্রের ধারে অবস্থিত শহর ও নগরের স্নানাগার , শৌচাগার এবং ঘরবাড়ির ব্যবহৃত নোংরা জল নদী এবং সমূদ্রের জলে অনবরত দূষণ ঘটাচ্ছে ।

(৪) আজকাল কৃষিকাজে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ও আগাছানাশক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় । এইসব রাসায়নিক আবার বৃষ্টির জলে ধুয়ে এসে পুকুর ও নদীতে পড়ে জলদূষণ ঘটায়।

(৫) আধুনিক ফিশারি বা মাছচাষ প্রকল্পে মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নানারকম রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয় । এরফলেও দিঘি , ভেরি ও পুকুরের জল দূষিত হয় । অন্যদিকে পুকুর ও দিঘির জলে গবাদি পশুর স্নান, হাঁসের চাষ , রোগীর মলমূত্রযুক্ত জামাকাপড় ধোয়া এবং সাবান দিয়ে কাপড়চোপড় কাচার ফলে জল দূষিত হয়ে যায় ।

(৬) অনেক সময় মৃত জীবজন্তু , এমনকি মানুষের মৃতদেহও নদী নালার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এতে নদী ও সমুদ্রের জল দূষিত হয় ।

(৭) খনিজ তেলবাহী জাহাজ থেকে যে তেল সমুদ্রের পড়ে তা সমূদ্রে পড়ে তা সমূদ্রের জলে দূষণ সৃষ্টি করে । এছাড়া ,

(৮) সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলে আধুনিক ট্রলারের দ্বারা অবৈঞ্জানিকভাবে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকারের ফলেও সমুদ্রে দূষণ বৃদ্ধি পায়।


জলে আর্সেনিক ও ফ্লুরাইডের উপস্থিতি ও তার ফল :

আর্সেনিক দূষণ

আর্সেনিক হল একরকম মারাত্মক বিষ । পারদের তুলনায় এই বিষ চারগুণ শক্তিশালী । আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ফলে আমাদের ত্বক , স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তনালীতে নানারকম অস্বাভাবিকতা দেখা যায় । হাতের চেটা এবং পায়ের পাতার তলায় কালো পচনশীল ক্ষত সৃষ্টি হতে থাকে , একে ব্ল্যাকফুট রোগ বলে । এছাড়া আর্সেনিকের প্রভাবে শ্বাসনালীর ক্ষতি , যকৃতের পচন , ত্বকের ক্যান্সার , মূত্রথলির ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।


মাটির নীচের স্তর থেকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে জল তুলে নেওয়ার ফলে মাটির নীচে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় , যেখানে নানারকমের আর্সেনিক ও ক্লোরাইড যৌগ বাতাসের সংস্পর্শে এসে অন্যান যৌগ পরিণত হয়। ওই যৌগগুলি অনেক ক্ষেত্রেই জলে দ্রবণীয় এবং নলকূপের জলের মাধ্যমে ওই বিষাক্ত যৌগ আমাদের পানীয় জলে এসে মিশে যায় ।


পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা , দক্ষিণ ২৪ পরগনা , নদীয়া , হুগলি , হাওড়া , মালদহ এবং বর্ধমান জেলায় ভূগর্ভস্থ জলে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে , যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি ।


ফ্লুরাইড দূষণ :

অর্সেনিকের মতো ফ্লুরাইডও হল একটি তীব্র ক্ষতিকারক গ্যাসীয় পদার্থ। জলের মধ্যে দ্রবীভূত ফ্লুরাইড থেকে ফ্লুরাইড থেকে মানবদেহে ক্রমাগত ফ্লুরাইড প্রবেশ করলে ফ্লুরোসিস রোগ দেখা দেয় । এই রোগে দাঁত ও হাড়ের নানান গঠনগত সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই রোগে আক্রান্ত , মানুষ ক্রমশ পঙ্গু হয়ে যায়। হাড়ের ও দাঁতের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ফ্লোরিনের বিক্রিয়ার ফলে হাড় ও দাঁত দুর্বল হলে যায়। এই রোগকে নক্‌ নি সিনড্রোম নামেও অভিহিত করা হয়। ফসফেট সার , প্লাস্টিক , কাচ শিল্প , ক্লোরিন যুক্ত যৌগ ব্যবহার হয় এরকম সব কারখানা থেকে নির্গত ফ্লোরিনের যৌগের মাধ্যমে দ্বারা জল দূষিত হতে পারে।

জলদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

(১) পুর এলাকার নোংরা ও বর্জ্য মিশিত জলকে পরিশোধিত করার পর নদী অথবা সমুদ্রে ফেলা , তা পরিষ্কার করা অথবা আবার ব্যবহারের উপযোগী করা উচিত ।

(২) কলকারখানার নোংরা জলকে পরিশোধিত করে নদীনালায় ফেলা অথবা আবার ওই জলকে কারখানার কাজে ব্যবহার করা প্রয়োজন ।

(৩) প্লাস্টিক , মৃতদেহ , কঠিন বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি নদীতে বা জলাশয়ে ফেলা উচিত নয়।

(৪) জলের অপব্যবহার এবং অপচয় যথাসাথ্য বন্ধ করা দরকরা ।

(৫) কৃষি জমিতে দেওয়া রাসায়নিক সার বা কীটনাশক যাতে সংলগ্ন জলাভূমি দূষিত না করে , সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত ।

(৬) বড় জলাশয় , নদী ইত্যাদিতে কাপড় না কাচা , সাবান না মাখা এবং গোরু – মোষ চান না করানো উচিত ।

(৭) জাহাজ থেকে যাতে তেল নির্গত হয়ে সমুদ্র না পড়ে , সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত ।

(৮) মল , মূত্র ও হাসপাতালের দূষিত জীবাণুযুক্ত আবর্জনা জলা উচিত নয়।