খর জল ও মৃদু জল কাকে বলে ?

খর জল ও মৃদু জল: পার্থক্য, কারণ ও খরতা দূরীকরণ

খর জল এবং মৃদু জলের মধ্যে পার্থক্য কী? জলের খরতার কারণ, অস্থায়ী ও স্থায়ী খরতা এবং খরতা দূরীকরণের সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

খর জল ও মৃদু জল কাকে বলে ?

প্রকৃতিতে সাধারণত জল দুই প্রকারে পাওয়া যায় — মৃদু জল এবং খর জল

  • মৃদু জল: যে জলে সাবান ঘষলে সহজেই ফেনা হয়, তাকে মৃদু জল বলা হয়। মৃদু জলে উপস্থিত খনিজ ও লবণের মাত্রা তুলনামূলক কম থাকে, তাই সাবানের কার্যকারিতা ভালো হয়।
  • খর জল: যে জলে সাবান ঘষলেও সহজে ফেনা হয় না কিংবা অনেক বেশি সাবান ব্যবহার করেও ফেনা তৈরি হয় ধীরগতিতে, তাকে খর জল বলা হয়। খর জলে উপস্থিত খনিজ ও ধাতব লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা সাবানের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

জলের খরতার কারণ কী?

প্রাকৃতিক জলে অনেক ধরনের ধাতব লবণ দ্রবীভূত থাকে। সাধারণত, ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), ও আয়রন (Fe) এর আয়নগুলোই জলের খরতার প্রধান কারণ। জলে এই ধাতব আয়নের বাই-কার্বোনেট, ক্লোরাইড ও সালফেট লবণের উপস্থিতিই খরতা সৃষ্টি করে।


খরতার প্রকারভেদ: অস্থায়ী খরতা ও স্থায়ী খরতা

অস্থায়ী খরতা:
যখন জলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনের বাই-কার্বোনেট লবণ দ্রবীভূত থাকে, তখন দেখা দেয় অস্থায়ী খরতা।
এই খরতা দূর করতে জলকে ফুটিয়ে তোলা যায়, কারণ ফুটানোর ফলে বাই-কার্বোনেট লবণ গলিত থেকে অদ্রাব্য কার্বোনেটে রূপান্তরিত হয়, যা পরে ফিল্টার করে আলাদা করা সম্ভব।
রসায়নিক বিক্রিয়া:

  • Ca(HCO 3 ​ ) 2 ​ →CaCO 3 ​ +H 2 ​ O+CO 2 ​
  • Mg(HCO 3 ​ ) 2 ​ →MgCO 3 ​ +H 2 ​ O+CO 2 ​
  • 2Fe(HCO 3 ​ ) 3 ​ →Fe 2 ​ (CO 3 ​ ) 3 ​ +3H 2 ​ O+3CO 2 ​

স্থায়ী খরতা:
যখন জলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনের ক্লোরাইড বা সালফেট লবণ দ্রবীভূত থাকে, তখন জল খরতায় স্থায়ী হয়ে যায়।
এ ধরনের খরতা ফুটিয়ে বা সহজে দূর করা যায় না এবং এটি পানীয় জল ও অন্যান্য কাজে সমস্যা সৃষ্টি করে।


অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ পদ্ধতি

অস্থায়ী খরতা দূর করতে জলকে ফুটিয়ে তোলা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। ফুটানোর সময় দ্রাব্য বাই-কার্বোনেট লবণ অদ্রাব্য কার্বোনেটে রূপান্তরিত হয়ে জল থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরিশ্রুত জল হয়ে ওঠে মৃদু জল।
এই প্রক্রিয়ায় জল থেকে খনিজ পদার্থের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যায়, ফলে জল ফেনাযুক্ত হয় সহজে এবং বিভিন্ন ব্যবহারেও নিরাপদ হয়।


খর জল ও মৃদু জলের ব্যবহার

  • মৃদু জল:
    পানীয় জল হিসেবে উপযুক্ত, কারণ এতে খনিজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে এবং এটি সাবানের সাথে সহজে প্রতিক্রিয়া করে।
  • খর জল:
    এই ধরনের জল সরাসরি পান করা বা ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, কারণ এতে ধাতব লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়া এটি নিত্যদিনের কাজ যেমন ধোয়া, রান্না ও শিল্পে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।

জলকে মৃদু বা খর জল হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় এর লবণীয় উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। খর জল মূলত ধাতব লবণের উপস্থিতির কারণে সাবানের সাথে প্রতিক্রিয়া কমে যায় এবং জল ব্যবহারে অসুবিধা তৈরি করে।
অস্থায়ী খরতা সহজেই ফুটিয়ে দূর করা যায়, তবে স্থায়ী খরতা দূর করা কঠিন। পানীয় ও অন্যান্য কাজে নিরাপদ জল নিশ্চিত করতে জল পরিশোধনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।