ওহ্মের সূত্র কী এবং এটি কীভাবে তড়িৎ প্রবাহের গতি নির্ধারণ করে? রোধের ধারণা ও প্রভাবসহ ওহ্মের সূত্রের বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
ওহ্মের সূত্র কী?
ওহ্মের সূত্র তড়িৎবিদ্যার একটি মৌলিক ও প্রধান সূত্র, যা প্রথম আবিষ্কার করেন জর্জ সাইমন ওহ্ম (George Simon Ohm) ১৮২৭ সালে। এই সূত্রটি বলে যে, কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব-পার্থক্য (ভোল্টেজ) বাড়ালে ওই পরিবাহীতে প্রবাহমান তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ (কারেন্ট) সমানুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়, যদি উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে।
ওহ্মের সূত্রের গাণিতিক রূপ
ওহ্মের সূত্রকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা হয় তিনটি সমীকরণের মাধ্যমে, যেগুলো একই অর্থ বহন করে: V∝IV \propto IV∝I
অর্থাৎ, ভোল্টেজ (V) এবং কারেন্ট (I) সমানুপাতিক।
এখন সমানুপাতিক ধ্রুবক RRR (রোধ) কে অন্তর্ভুক্ত করলে, V=I×RV = I \times RV=I×R
এখানে,
- VVV = বিভব-পার্থক্য বা ভোল্টেজ (ভোল্টে),
- III = প্রবাহমাত্রা বা কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ার),
- RRR = রোধ (ওহ্মে)।
রোধ (Resistance) কী?
রোধ হলো একটি পদার্থের বৈদ্যুতিক প্রবাহের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, কোনো পরিবাহীর রোধের মান অপরিবর্তিত থাকে। তবে রোধের মান নির্ভর করে:
- পরিবাহীর দৈর্ঘ্য: দৈর্ঘ্য বাড়লে রোধ বাড়ে।
- পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদ (cross-sectional area): প্রস্থছেদ বাড়লে রোধ কমে।
- পরিবাহীর উপাদান: বিভিন্ন উপাদানের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতার ক্ষমতা ভিন্ন, তাই রোধও ভিন্ন হয়।
ওহ্মের সূত্রের গুরুত্ব
- এটি বৈদ্যুতিক সার্কিট বিশ্লেষণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- বৈদ্যুতিক উপাদানগুলোর কর্মক্ষমতা নির্ধারণে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ডিজাইন ও পরীক্ষায় ওহ্মের সূত্র ব্যবহৃত হয়।
- এর সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক্তি ও শক্তি ক্ষয়ের হিসাব করা সম্ভব।
উদাহরণ
ধরা যাক, একটি রোধের মান R=5 Ω এবং তার দুই প্রান্তে ১০ ভোল্টের বিভব-পার্থক্য দেওয়া হয়েছে। তাহলে ওই রোধে প্রবাহমান কারেন্ট হবে:
I=V/R=10/5=2 অ্যাম্পিয়ার
অর্থাৎ, রোধে ২ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হবে।
ওহ্মের সূত্র হলো বৈদ্যুতিক প্রবাহের সাথে বিভব-পার্থক্যের সম্পর্ক স্থাপনকারী মৌলিক সূত্র। এটি বলে, উষ্ণতা ও অন্যান্য অবস্থার অপরিবর্তিত থাকলে, কোনো পরিবাহীর রোধের মান অপরিবর্তিত থাকে এবং ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যে সরল সমানুপাত থাকে। বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও সার্কিট ডিজাইনে এই সূত্র অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।